একটি অজানা সমাধি। স্থানীয়দের কাছে যুগ যুগ ধরেই কৌতুহলের কেন্দ্রবিন্দু। কেউ কেউ সমাধিকে বলছেন গায়েবি মাজার। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত স্থাপনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মোঘল যুগের স্থাপত্যশৈলীর অদ্ভুত স্বকীয়তা।
ঐতিহাসিক যুগের বিভিন্ন স্থাপনার বিষয়ে বিষদ বিবরণ পাওয়া গেলেও, এখনও রহস্যে ঘেরা এই অজানা সমাধিটি। স্থাপনাটি রাজধানীর মোহাম্মাদপুর বাশবাড়ী প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত।
কথিত আছে, মোঘল সম্রাট শায়েস্তা খানের কোনো এক মেয়ের কবর এটি। তবে তার কোনো প্রমাণ কোথাও মেলেনি। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বে রয়েছে।
স্থাপনাটি বাইরের দিক থেকে চতুষ্কোণাকৃতির এবং ভেতরের দিকে অষ্টকোণাকৃতি বিশিষ্ট। চারদিকে আছে চারটি দরজা। খোলা আছে কেবল পূর্ব দিকের দরজাটি। ভেতরে রয়েছে একটি কবর। হয়তো শুয়ে আছেন মোঘল আমলের কোনো এক শাহাজাদি।
পুরাকীর্তি ভবনের বাইরে উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে আরো দুটি কবর। এ কবরদুটি মাজারের খাদেম ইউসুফ শাহ এবং তার স্ত্রী সোনাভানুর। বর্তমানে মাজারটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত হলেও দুটি বিজ্ঞপ্তিমূলক সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো দায়িত্বশীলতা নজরে পড়ে না।
স্থাপনাটিতে দেখা গেছে দুটি দানবাক্স। কে বা কারা এই দানবাক্স স্থাপন করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জাফর শেখ নামের এখানকার এক স্থানীয় ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, বংশপরম্পরায় যারা এই স্থাপনাটি দেখাশোনা করেন দানবাক্স দুটি তারাই স্থাপন করেছেন।
তাদের দায়িত্বে প্রতি বছর এখানে ওরসের আয়োজন করা হয় বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় অনেকের দাবি, সাত গম্বুজ মসজিদ ও এই অজানা সমাধিটি ‘গায়েবি’। কে বা কারা এই স্থাপনার স্থপতি সেটাও কারোরই জানা নেই। সবাই শুধু লোকমুখে শুনেছেন এর কথা।
এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জ্বালানো হয় মোমবাতি ও আগরবাতি। সন্ধ্যার পর দেখা যায় কিছু কিছু ভক্তের সমাগম। কবরটি কার জানতে চাইলে মাজারের এক ভক্ত বলেন, ‘এইডা গাইবি মাজার। গাইবি মাইনষের নাম জানবেন কেমনে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাজারের অধিকাংশ ভক্তই মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্থানি।
মোঘল আমলের এ অনবদ্য স্থাপত্যশৈলীর যেন কোনো প্রকার ক্ষতি সাধিত না হয় সে বিষয়টির দিকে নজর দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ এর ১৯ ধারায় শাস্তির বিধান রেখে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের দাবি, বাংলার ইতিহাস রক্ষায় স্থাপনাটির প্রতি সরকারি নজরদারি আরো বাড়ানো উচিত।