হেফাজতের সাথে সরকারের সম্পর্ক ইতিবাচক- ইইউ

0

বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে যেভাবে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে, তাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সরকারের এ দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ’ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদন।

ইউরোপ দিবস উপলক্ষে সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, “সমাজের বিভিন্ন অংশ, যারা হয়ত আড়ালেই থাকত, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার পদক্ষেপ…আমি মনে করি ইতিবাচক।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি গণভবনে হেফাজতে ইসলামীর নেতাদের উপস্থিতিতে ওলামাদের একটি অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ‘লেডি জাস্টিস’ ভাস্কর্য সরানোর কথাও বলেন।

কয়েকটি ইসলামী সংগঠন শুরু থেকেই রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’ আদলের ওই ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে আসছে। হেফাজত ওই ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে ৫ মে মতিঝিলে ফের সমাবেশের হুমকিও দিয়েছিল।

যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতায় রাজপথে নামা হেফাজত ২০১৩ সালে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ডেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে তাদের উৎখাত করা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয় বিভিন্ন বাম সংগঠন। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে ‘মিতালি করা’ আত্মঘাতী হবে বলেও সতর্ক করা হয় সরকারকে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মায়াদন বলেন, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে দেশের নাগরিক সমাজই বলতে পারবে।

“একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ থাকা জরুরি। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্ভর করে কিছু দীর্ঘমেয়াদী বিষয়ের ওপর, যেগুলো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেবে।

“সমাজের কোনো অংশ, কোনো পক্ষকেই দূরে সরিয়ে রাখা উচিত না।… এর কার্যকারিতাও আমাদের দেখতে হবে… তবে আমি মনে করি এটা (সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি) ইতিবাচক।”

মতবিনিময়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন মায়াদুন।

যুক্তরাজ্যে গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় আসার পরের বছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে নজর ছিল সবার। কারণ ফ্রান্সেও একই শোর তুলেছিলেন কট্টর ডানপন্থি নেতা লো পেন। অভিবাসন বিরোধিতার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ফ্রান্সকে গুটিয়ে নেওয়ারও ঘোষণা ছিল ন্যাশনাল ফ্রন্টের এই নেতার।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মধ্যপন্থি ইমানুয়েল মাক্রোঁ। শেষ পর্যন্ত রোববার রানঅফ ভোটে পেনকে পেছনে ফেলে মাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও স্বস্তি পেয়েছে।

এক প্রশ্নে মায়াদন বলেন, “ইইউ অনেক নমনীয় একটি প্রতিষ্ঠান। ইইউ প্রতিষ্ঠার আগেও এ ধরনের বিতর্ক ছিল। আমরা এতে অভ্যস্ত, একে গ্রহণ করি এবং স্বাগত জানাই। ইইউর নীতি বাস্তবায়নের পথ পুনর্গঠনে এটি আমাদের সহায়তা করে।”

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের একটি ইতিবাচক অর্জন হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার ফলে এখানে পোশাক শিল্প বেড়ে উঠেছে এবং কয়েক লাখ নারী দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কেরও প্রশংসা করেন মায়াদন।

নিজের দেশ ফ্রান্সসহ অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, এখানে আমরা কখনও বন্ধ দরজার মুখোমুখি হইনি।

“আমরা যখনই সরকারের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি… আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং কথা বলার জন্য কাউকে না কাউকে পেয়েছি, যিনি সবসময় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।