‘এত দিনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে।’ না, বিএনপি নেত্রী বিষাদে নয়, সদম্ভেই বলেছেন, ‘তাঁর দল ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের মতো দেশ শাসন করবে না।’ একেবারে পষ্টাপষ্টি কথা। বিএনপির সদস্য সংগ্রহের অভিযান শুরু করতে গিয়ে এমন নিরেট সত্য কথাটি তিনি বলেছেন। আমার প্রশ্ন, অতীতে কি বিএনপি কোনো দিন আওয়ামী লীগের কায়দায় দেশ শাসন করেছে যে ভবিষ্যতে করবে?
বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার যে কায়দায় দেশ শাসন করছে, বিএনপি অতীতে কোনোকালেই সে কায়দায় দেশ শাসন করেনি। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলেও সে কায়দায় সে দেশ শাসন করবে না। এ কথাটা আগামী নির্বাচনের আগেভাগেই বলে ফেলে বিএনপি নেত্রী ভালো করেছেন। বাংলার মানুষ সতর্ক হতে পারবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চরিত্রগত অমিল দুস্তর। বিএনপির জন্ম সেনানিবাসে। দলটি গণতন্ত্র নয়, সেনাতন্ত্রের সিভিল ফেস ছিল। তার শাসনে সেনা শাসনের ছাপ পড়ে।
বেগম জিয়ার কথাবার্তা মাদাম জেনারেলের মতো। তিনি গণতন্ত্রের ভাষায়ও কথা বলেন না। তিনি কথায় কথায় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। কখনো জামায়াতি-হেফাজতি সন্ত্রাসের সাহায্যে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালান। হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগামী ৫০ বছরেও আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’ এই হুমকির একমাত্র অর্থ দাঁড়ায় আগামী ৫০ বছর বেগম জিয়া একাই ক্ষমতায় থাকবেন। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেবেন না। জনগণ চাইলেও দেবেন না। তাহলে এটা কী ধরনের গণতন্ত্র হবে? এটা তো একদলীয় শাসন।
৫০ বছরের জন্য দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বপ্ন যিনি দেখেন, তিনি কী করে দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন? আওয়ামী লীগ তো কখনো বলেনি, তারা ৫০ বছর ধরে দেশ শাসন করতে চায়। তারা তো একবারও বেগম জিয়াকে বা বিএনপির কোনো নেতাকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়নি। বরং দেশত্যাগী তারেক রহমানকে বিদেশ থেকে দেশে ডেকে এনে তাঁর দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিচার করতে চায়। আর এই বিচার ও দণ্ড এড়ানোর জন্য তারেক রহমানই তো মুচলেকা দিয়ে দেশ ছাড়ার পর আর দেশে ফিরছেন না।
বিএনপি দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করে। বলে, তাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের নির্মম স্টিমরোলার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ ধরনের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিই না। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিএনপির দুর্নীতি ও অপশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও অপশাসনের তারতম্য আছে। ভারত যে এখনো এত বড় গণতান্ত্রিক দেশ, সে দেশেও কংগ্রেসের শাসন ও বিজেপির শাসনের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে।
বড় পার্থক্যটা হলো, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপশাসনের অভিযোগ থাকলেও কংগ্রেস ভারতের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তিটাকে ভাঙার চেষ্টা করেনি। কখনো কখনো সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপস করেছে (বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও মাঝেমধ্যে যা করে); কিন্তু ক্ষমতার লোভে সাম্প্রদায়িক জিঘাংসাকে কখনো উসকে দেয়নি। মুসলমানের মসজিদ ভাঙেনি। কিংবা খ্রিস্টানদের চার্চের অবমাননাও করেনি।
বিজেপি ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙেছে। খ্রিস্টানদের চার্চের অবমাননা করেছে। দলিতদের সংহার নীতি অনুসরণ করেছে। গরু জবাই করার অভিযোগে মুসলমান নাগরিককে শিবসেনার দল হত্যা করেছে।
এক ভারতীয় সাংবাদিকের মতে, বিজেপি ভারতে গণতন্ত্রের বদলে গোতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যা স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতের মৌল আদর্শের বিরোধী। দুর্নীতির ক্ষেত্রেও কংগ্রেস ও বিজেপি শাসনের মধ্যে পার্থক্য আছে। রাজীব গান্ধী থেকে মনমোহন সিং, এমনকি বর্তমান কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেসের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। রাজীব গান্ধী দীর্ঘকাল হয় মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আনীত বোফর্স মামলা এখনো চলছে। সোনিয়া গান্ধীকেও পাট্রিয়ট কাগজ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে।
কিন্তু বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির যে অভিযোগ স্বয়ং রাহুল গান্ধী প্রকাশ্যে তুলেছেন, সেই অভিযোগ বিজেপি নেতারা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। ভারতে কংগ্রেস ও বিজেপির শাসনের মধ্যে অবশ্যই বড় পার্থক্য আছে। বিজেপির কোনো নেতা বাংলাদেশের খালেদা জিয়ার মতো জাঁক দেখিয়ে বলতে পারেন, ‘আমরা কংগ্রেসের মতো দেশ শাসন করছি না।’ অবশ্যই তাঁরা তা করছেন না। কংগ্রেস তার সব পতন-স্খলন সত্ত্বেও ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভটি রক্ষার চেষ্টা করেছে। আর বিজেপি সেখানে সেই স্তম্ভটি ভেঙে মধ্যযুগীয় কট্টর হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
সব দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির মধ্যেই সম্ভবত একটি জিঘাংসা ও বিভাজনের প্রবণতা লুকিয়ে থাকে। ভারতে বিজেপির মধ্যেও তা আছে। তারা ক্ষমতায় বসে শুধু ভারতের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রনীতির ভিত্তি ভাঙারই চেষ্টা করছে না, এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদেরও অবমাননা ও চরিত্র হননের চেষ্টা করে চলেছে। আধুনিক ভারতের প্রধান কারিগর জওহরলাল নেহরুর চরিত্র হননের মিডিয়া-ক্যাম্পেইন তারা তো চালাচ্ছেই, ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কেও করা হচ্ছে নানা অবমাননাকর উক্তি।
সম্প্রতি বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ প্রকাশ্য জনসভায় বলেছেন, ‘গান্ধী একজন চতুর বেনিয়া ছিলেন।’ তাঁর এই উক্তির বিরুদ্ধে সারা ভারত গর্জে উঠেছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের সম্পর্কে বিএনপি নেতা-নেত্রীদেরও অবমাননাকর উক্তির কোনো সীমা নেই। এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হনন, তাঁর ছবি ছিঁড়ে ফেলা ও তাঁর সম্পর্কে ধৃষ্ট উক্তি করা একসময় বিএনপি নেতা-নেত্রীদের নিত্যদিনের কাজ ছিল। এমনকি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে মুক্তিযুদ্ধকালীন এক সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের ছবি বসিয়ে তাঁকে জাতির পিতার সমমর্যাদার নেতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা নষ্ট করার জন্য এক জাল স্বাধীনতার ঘোষকও তৈরি করা হয়েছিল।
সুতরাং দেশ শাসনে বিএনপির নীতি যে আওয়ামী লীগের মতো হবে না— এ কথাটি আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেভাগেই বলে বেগম জিয়া যেমন সত্য কথা বলেছেন, তেমনি দেশের মানুষকে সতর্ক হওয়ারও সুযোগ দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন, দেশ শাসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সরকারের মধ্যে পার্থক্যটা কী? চতুর বিএনপি নেত্রী সে কথাটা খুলে বলেননি; কিন্তু দেশের মানুষ এই পার্থক্যটার কথা জানে। সবচেয়ে বড় পার্থক্যটাই হলো, আওয়ামী লীগের মধ্যে যত পতন-স্খলন থাকুক, এই দল স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং সেই যুদ্ধের মৌলিক আদর্শগুলো রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশকে স্বাধীনতাযুদ্ধের আদর্শভিত্তিক একটি সর্বজন প্রশংসিত সংবিধান (১৯৭২ সালের সংবিধান) উপহার দিয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকের জোরে সংবিধান সংশোধন করে তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করেন। দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাম্প্রদায়িক দলগুলোকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে তাঁর পাকিস্তানি পাসপোর্টসহ বাংলাদেশে এসে রাজনীতি করার অনুমতি দেন। একাত্তরের কোলাবরেটর শাহ আজিজুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানান। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানের কায়দায় রেডিও বাংলাদেশ করেন।
মুুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলাকে জিয়াউর রহমান কার্যত বিলুপ্ত করে পাকিস্তান জিন্দাবাদের কায়দায় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ প্রচলন করেন। জিয়াউর রহমান নিজেই নকল কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেড় হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করেন। দেশের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার চেষ্টাও তখন করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মিত্র ভারতকে পাকিস্তানের স্বার্থে শত্রুতে পরিণত করার নীতি অনুসরণ করেন। এককথায় স্বাধীন বাংলাদেশকে আবার আধাপাকিস্তান করার উদ্যোগ নেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুবের কৌশল অনুসরণ করে একটি ‘না’ লেখা কালো বাক্সকে প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিয়ে প্রহসনের গণভোটে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেন।
তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় বসার প্রথম দিনেই দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রচণ্ড ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে অসংখ্য নর-নারী নিহত হয়। জনগণ তাঁর নাম দেয় ‘তুফানি বেগম’। ২০০১ সালে বেগম জিয়া যখন আবার ক্ষমতায় আসেন তখন আওয়ামী লীগের ভোটদাতা, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতনের সাইক্লোন। অসংখ্য মানুষকে মিথ্যা মামলায় জেলে দেওয়া হয়। কয়েক হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতে, তাদের সংখ্যা ছয় হাজার থেকে ১০ হাজার।
পূর্ণিমা শীলদের মতো গণধর্ষণের শিকার কুমারী, সধবা, বিধবা নারীর সংখ্যা কত দাঁড়িয়েছিল তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
একটি বিদেশি সংবাদপত্র তখন মন্তব্য করেছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেই হয় ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, না হয় মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় (Disaster) বাংলাদেশকে গ্রাস করে।
খালেদা জিয়া একটি আগাম সত্য কথাই বলেছেন, ‘তাঁরা আবার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের কায়দায় দেশ শাসন করবেন না।’ কী কায়দায় দেশ শাসন করবেন তার আলামত তো তাঁদের প্রতিবারের সরকারের আমলেই জ্বলজ্বল করছে। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ঠুরভাবে দলন। প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ, স্বাধীনতার শত্রুদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো ইত্যাদি।
বিএনপি এখন অভিযোগ করছে, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবশ্যই বিএনপির বহু শীর্ষস্থানীয় নেতাকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে আদালতে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করাও হয়েছে। তাঁরা জেলে যাচ্ছেন আবার জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বেরিয়েও আসছেন। কিন্তু বিএনপির শাসনামলে শাহ কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেককে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির তেমন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একজনকেও হত্যা করা হয়নি।
হিংস্র মৌলবাদ ও বাংলা ভাইদের উত্থান বিএনপির আমলে। শেখ হাসিনার জনসভায় যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, তা সফল হলে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতাও জীবিত থাকতেন না। আওয়ামী লীগের শাসনামলে খালেদা জিয়ার জনসভায় কখনো একটি ফুলের টোকাও পড়েনি। তথাপি তাঁর মায়াকান্নার শেষ নেই। আওয়ামী লীগের যত দোষই থাকুক, হত্যার রাজনীতিতে দলটি নেই। হত্যার রাজনীতির সূত্রপাত ও চর্চা বিএনপির দ্বারা এবং তাদের শাসনামলে। সুতরাং বেগম জিয়া ঠিকই বলেছেন, দুই দলের দেশ শাসনপদ্ধতি ভিন্ন তো হবেই।
সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কথা এখানে আর না তোলাই ভালো। পেট্রলবোমা মেরে রাজপথে নিরীহ নর-নারী হত্যার সন্ত্রাসী রাজনীতির সোল এজেন্সি একসময় বিএনপিই গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ কোনো সময়েই মানুষ হত্যার এই রাজনীতিতে নামেনি। আওয়ামী লীগের আমলে বরং জঙ্গিদের সন্ত্রাস দমিত হয়েছে। দুর্নীতি অবশ্য নির্মূল হয়নি। দুর্নীতি মনুষ্য সমাজের একটি আদি পাপ। কমিউনিস্ট আমলে রাশিয়াতেও দুর্নীতি নির্মূল করা যায়নি। কমিউনিস্ট চীনে তো এখনো দুর্নীতির দায়ে বড় বড় কমিউনিস্ট নেতাকে পর্যন্ত ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে।
এ ধরনের দুর্নীতি বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসনামলেও আছে। কিন্তু বিএনপি আমলের মতো দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়নি। হাওয়া ভবন নাম দিয়ে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের হেডকোয়ার্টার গড়ে তোলা হয়নি। বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে ভিন্নভাবে দেশ শাসন করার এই আভাস দিয়ে বেগম জিয়া ভালোই করেছেন।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে প্রতিহিংসার রাজনীতির ছোবলে কত মানুষ প্রাণ হারাবে, কত মানুষ জেলে বন্দি হবে, কত শত পূর্ণিমা শীলকে গণধর্ষণের শিকার হতে হবে সে সম্পর্কে দেশের মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে বেগম জিয়া আমাদের ধন্যবাদের পাত্রী হয়েছেন। কথায় বলে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। বেগম জিয়া আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে কিভাবে দেশ শাসন করবেন তার আভাস দিয়ে অতীতে বিএনপির শাসনামলে ঘরপোড়া মানুষকে আবার সতর্ক করে দিলেন। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
লন্ডন, সোমবার, ৩ জুলাই ২০১৭
পরিচিতি: গ্রন্থকার, কলাম লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক