বিএনপির সমাবেশে দণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকারের সন্তানের পাকিস্থানি স্লোগান, অশনি সংকেত!

0

সময় এখন:

একাত্তরের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে বিএনপি নেতা- কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকাচৌর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বিএনপির রাজনীতি যে অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম খুঁটি সাকাচৌর পরিবার। খালেদা জিয়াকে কুকুর এবং দলের নেতাদেরকে লেজ আখ্যা দিয়ে এই সাকাচৌ বলেছিলেন, আগে জানতাম কুকুর লেজ নাড়ায়, এখন দেখি লেজ কুকুরকে নাড়ায়। অত্যন্ত জঘন্য ও নোংরা ভাষা প্রয়োগের জন্য কুখ্যাত এই পরিবারটি।

সাকাচৌর বাবা ছিলেন পাকিস্থান আমলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরির দায়ে কারাবরণ করা ফজলুল কাদের চৌধুরী ওরফে ফকাচৌ। এই কুখ্যাত মুসলিম লীগ নেতার সন্তানরা সবাই একাত্তরে রাজাকার ছিলেন। তাদের নিবাস চট্টগ্রামের গুডস হিলের বাড়িটি ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের ওপর নির্যাতনের ক্যাম্প। যেখানে শত শত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল, নারীদের সম্ভ্রম লুট করা হতো। সেই কুখ্যাত ও সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সাকাচৌকে নিয়ে নির্লজ্জ রাজনৈতিক দল বিএনপি আজও গর্ব করে।

মির্জা ফখরুলরা যেমন পিঠে গুলি খেয়ে মৃত্যুবরণ করা জিয়াকে শহিদ আখ্যা দেয়, খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও তারেক-কোকোকে শিশু মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে, সেই দলের নেতারা এখন ফাঁসি হওয়া রাজাকার সাকাচৌকেও শহিদ দাবি করে। সাকাচৌর সন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরী ওরফে হুকাচৌ যখন ভরা জনসভায় তার রাজকার বাবাকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে, তখন বিএনপি তাতে সমর্থন দেয়।

একজন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে ‘শহিদ’ আখ্যা দেওয়ার অর্থ হলো আদালত অবমাননা করা। একইভাবে কাদের মোল্লাকে ‘শহিদ’ দাবি করে আদালত অবমাননার দায়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ ও সাংবাদিক রুহুল আমনি গাজীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই একইভাবে হুকাচৌ আদালত অবমাননা করেছেন চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপি জনসভায়।

বিএনপি নেতারা আজকাল নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল দাবি করলেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযোদ্ধাদের অপদস্থ করা এবং সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধাচরণের মাধ্যমে আদালত অবমাননা করছেন প্রকাশ্যে। লন্ডনে বসে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম হোতা হুকাচৌ শুধু তার বাবাকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে ক্ষান্ত হননি, তিনি একইসাথে জনসভায় ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগানও দিয়েছেন। এই স্লোগানটিকে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ধর্মীয় স্লোগান মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে তা নয়।

ইসলামের সূতিকাগার আরব অঞ্চলে নবী মুহাম্মদ (স.) এর আমল থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোনো স্লোগানের অস্তিত্ব নেই। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এই স্লোগানটি কি তবে ইসলামসম্মত নয়? এর শুরু হয়েছিল কীভাবে?

প্রখ্যাত আলেম এবং ইসলামি স্কলারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এই স্লোগানের উৎপত্তি পাকিস্থানি সেনাবাহিনীতে। এর আগে এই স্লোগানের কোনো ইতিহাস নেই। মূলত পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর দেখাদেখি একাত্তরে এই স্লোগান গ্রহণ করে ইসলামের চরম দুশমন জামায়াতে ইসলামি। যে স্লোগান দিয়ে তারা একাত্তরে স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনসহ যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল এই স্লোগান দিয়ে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার হাতে জামায়াতের পুনর্বাসনের পর জামায়াত নতুন করে এই পাকিস্থানি স্লোগানটি ব্যবহার শুরু করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা, তাদের ওপর সশস্ত্র হামলার প্রতিটিতে জামায়াত-শিবিরের খুনিরা এই স্লোগান ব্যবহার করেছে।

এখানে ‘নারা’ শব্দটি ফার্সি, যার অর্থ অকারণ চিৎকার, হৈ চৈ করে স্লোগান দেয়া। ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ স্লোগানের অর্থ দাঁড়ায়, “বেহুদা স্লোগান দাও আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।” নাউযুবিল্লাহ।

জামায়াতকে এজন্যই ইসলামি স্কলার ও হাক্কানি আলেমরা কাফের বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ, তারা মানুষের মাঝে ভ্রান্ত আকিদা ছড়াচ্ছে। এই অবমাননাকর স্লোগানটি আজ উচ্চারিত হলো বিএনপির জনসভায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পদদলিত করা বিএনপি এখন হুকাচৌদের নেতৃত্ব ও অর্থায়নে জঙ্গি সংগঠনে রূপ নিতে যাচ্ছে।

দেশের সাধারণ মানুষের আজ একটাই দাবি, কানাডার আদালত কর্তৃক দুবার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে সাব্যস্ত হওয়া বিএনপি এবং ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ জঙ্গি সংগঠন বলে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া জামায়াত-শিবিরকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করা হোক। এই দলগুলোর নেতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা হোক। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলায় রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বংশধরদের ঠাঁই নাই।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।