কূটনীতি ডেস্ক:
বিএনপির পায়ের নিচ থেকে সরে যাচ্ছে মাটি। কোথাও পাত্তা পাচ্ছেন না। বিপুল অর্থ খরচাকারী লবিং এবং দেন-দরবারের ফল মিলছে উল্টো!
নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপির নানারকম তালবাহানা এবং আব্দারে বিরক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রদূতগণ। প্রায়শঃ এসব বিষয়ে সরকারকে চাপ দিতে দূতাবাসগুলোতে বিএনপি নেতারা ধর্ণা দেন। বৈঠকের নামে তাদের সাথে দেন-দরবারের বিষয়টি কূটনীতিকরা আর ভালোভাবে নিচ্ছেন না। কারণ, সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং উচ্চ পর্যায় থেকে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, প্রটোকল এবং এখতিয়ার বহির্ভূত কাজে দূতদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশ ভালোভাবে নিচ্ছে না। এতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। ফলে বিদেশি কূটনীতিকরা আগের চেয়ে অনেক সংযত এখন।
গত মঙ্গলবার ১৩ই জুলাই তারিখে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি। বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। জাতিসংঘের নবনিযুক্ত আবাসিক সমন্বকারী গোয়েন লুইসের সাক্ষাতের পরদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এই বৈঠক করে বিএনপি। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরকারকে বিএনপির ফর্মূলায় হাঁটার জন্য চাপ প্রয়োগের অনুরোধ করা হয়।
ইউরোপিয় ইউনিয়নের দূত বৈঠকে বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেন। ইতিপূর্বে বহুবার বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে বিএনপির মিথ্যা বক্তব্য এবং পরবর্তী ফলাফল সম্পর্কে সচেতন ছিলেন বলেই এমন সতর্কতা অবলম্বন। তাই বিএনপির আব্দার আর অনুনয়ের বিপরীতে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখেন চার্লস হোয়াটলি। যা বোঝা গেল আজ তার বক্তব্যে।
আজ শনিবার (১৬ জুলাই) সকালে গুলশানে অনুষ্ঠিত সেন্টার ফর গর্ভন্যান্স স্টাডিজের সম্মেলনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে চার্লস হোয়াটলি বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চায় ইইউ। নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করে হোয়াটলি সাফ জানিয়ে দেন, নির্বাচন নিয়ে ইইউ কোনো পক্ষাবলম্বন করছে না। জনগণের মতামতে এই নির্বাচন বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ইইউ।
ইইউ’র দূত বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ইউরোপিয় ইউনিয়ন। আইসিজে, আইসিসি যদিও সংকট সমাধানে কাজ করছে তবুও আমরা সবসময়ই বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করে যেতে চাই। ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে শরণার্থীর সংখ্যা পুরো বিশ্বেই বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিকভাবেই কাজ করে যেতে চাই। আরএমজি (তৈরি পোশাক) সেক্টর বাদেও অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নয়ন করছে বাংলাদেশ। সেসব দিকেও ইউরোপিয় ইউনিয়ন বিনিয়োগে আগ্রহী।
ইইউ’র সাথে বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা গণমাধ্যমের সামনে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, সরকারকে এবার এক হাত দেখিয়ে ছাড়বে বিএনপি। বিদেশি সংস্থার কাছে খুব একচোট নালিশ দেওয়া গেছে, নিশ্চয় তারা সরকারকে বকে দেবে। আর সরকারও সুড়সুড় করে বিএনপির সুরে নাচতে শুরু করবে। প্রকৃতপক্ষে ইইউ’র রাষ্ট্রদূতের আজকের বক্তব্য বিএনপিকে হতাশার চোরাবালিতে ফেলে দিয়েছে। ন’ মণ ঘি পুড়লেও রাধা যে নাচল না!