জাল সনদে দাম্মাামের স্কুল কমিটিতে জামায়াত নেতা!

0

প্রবাস ডেস্ক:

উন্নত দেশ ও জাতি গঠনের আসল কারিগর শিক্ষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। যাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। কোমলমতি শিশুদের মাঝে তারা গড়ে তোলেন সুনাগরিক হওয়ার সমস্ত গুণাবলী। শিশুরা যেন সুশিক্ষা পায়, একদিন জাতির কর্ণধার হতে পারে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।

কিন্তু শিশুদের মাঝে যারা সততা, নৈতিক চরিত্র ও কলুষমুক্ত আচরণের শিক্ষা দেবেন, তারাই যদি হন অসৎ, প্রতারক এবং দেশবিরোধী, তবে সেই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে শঙ্কায় পড়বে।

সৌদি আরবের দাম্মামে অবস্থিত ”বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল” একটি স্বনামধন্য বাংলাদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। এখানে অধ্যায়নরত আছেন বিভিন্ন দেশের ও ভাষাভাষীর মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম কারণ, এখানে পাঠদানকারী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে বহুজাতিক ও বহুভাষিক শিক্ষকমন্ডলী, যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ এবং নিবেদিতপ্রাণ।

এই প্রতিষ্ঠানটি সঠিক ও দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য রয়েছে ৩ বছর মেয়াদি একটি নির্বাচিত কমিটি। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়। কমিটির সদস্য নির্বাচনে রয়েছে বিশেষ কিছু নির্ণায়ক ও ধারা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়ান (কেএসএ) রেসিডেনশিয়াল পারমিট, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যায়নপত্র এবং সর্বোপরি অভিভাবকবৃন্দের গ্রহণযোগ্যতা।

চলতি বছরে এই কমিটির সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য আভ্যন্তরীণভাবে দরখাস্ত জমা নেয়া হয়। আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক অভিভাবক তার আবেদন পত্র জমা দেন, যেখানে তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেন। সেই জমাকৃত নথিপত্র দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রীতিমত হতবাক!

সনদটি ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়, সনদে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নামটি যে হস্তাক্ষরে লেখা হয়েছে, তা নিখুঁত নয়। সেখানে অক্ষরগুলো অবিন্যস্ত। জমা দেওয়া স্নাতক ডিগ্রীর এই সনদপত্রটি দেখে সন্দেহ তৈরি হলে তা নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে তদন্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সনদটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মামুন যে সনদপত্রটি দাখিল করেছেন তা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত। অধিকন্তু, সনদটি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত। এমনকি সর্বশেষ সত্যায়ন করা হয়েছে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, র্কীভাবে একটি জাল সনদ এতগুলো সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেয়েছে? যেখানে সনদটি খালি চোখে দেখলেই বোঝা যায় এটি কারসাজি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য চরিতার্থে তাকে এমন একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে রাখতে চাচ্ছে কেউ, যার দ্বারা পরবর্তীতে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সুবিধা হয়?

কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আব্দুল্লাহ আল মামুন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে জড়িত। দেশে থাকতেও তার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ ছিল।

কেন আল মামুনের সনদটিকে জাল বলা হচ্ছে?

সনদে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নামের অবিন্যস্ত অক্ষরগুলো ছাড়াও সনদ প্রদানকারীর নামটি দেখে একটু খোঁজ নিলেই জানা যায় স্বাক্ষরটি ভুয়া। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) ছিলেন মো. বাহালুল হক চৌধুরী, যার স্বাক্ষর সনদপত্রটিতে নেই।

এছাড়াও নোটারী পাবলিক এবং দু’টি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যায়ন একই দিনে সম্পন্ন হয়েছে, যা সন্দেহের অন্যতম কারণ। দিনে দিনে কোনো মন্ত্রণালয় থেকে এভাবে কোনো সনদ প্রত্যয়ন করিয়ে আনা যৌক্তিক কারণেই অসম্ভব।

আভ্যন্তরীণভাবে সনদটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে জানা যায়, উক্ত সময়ে যতগুলো সনদপত্র ইস্যু করা হয়েছিলো, তার প্রতিটিতেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীর স্বাক্ষর রয়েছে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম কৌশল হচ্ছে, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন জায়গার পরিচালনা কমিটিতে নিজেদের লোক বসানোর চেষ্টা করে। প্রয়োজনে বড় অংকের অর্থ খরচ করতেও তারা পিছপা হয় না। আর কোনোভাবে একজন ঢুকতে পারলেই তার মাধ্যমে বাকিদের নিযুক্ত হওয়ার পথ খুলে যায়।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, দাম্মামের পরিচালনা কমিটিতে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সদস্যপদ প্রার্থীতা সেই সূক্ষ্ম কৌশলের একটা অংশ বৈ ভিন্ন কিছু নয়।

প্রসঙ্গত, এমন পরিচালনা কমিটিগুলো স্কুলের বিভিন্ন নীতিনির্ধারনী বিষয়, শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন খাতে আর্থিক ব্যয় নির্ধারণ ছাড়াও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সংশ্লিষ্ট থাকে।

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। তাই ”বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, দাম্মাম”-এর মত একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল কমিটি নির্ধারণে যোগ্য ব্যক্তির অবস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

একই সাথে একটি জাল সনদপত্র কীভাবে এতগুলো সরকারী প্রতিষ্ঠানের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিয়ে প্রত্যায়নপত্র অর্জনে সক্ষম হলো, সে বিষয়টিও তদন্তপূর্বক খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।