স্পেশাল করেসপন্ডেন্স:
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। ২০০১ সালে জামায়াত যখন ক্ষমতায় আসে তখন তিনি পাদপ্রদীপে আসেন। অবশ্য ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোচনায় আসেন গোলাম আযমের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলায়। এই মামলার মধ্যদিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সবার কাছে পরিচিতি পান। এরপর তিনি জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাদের পক্ষে প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
এই সময় দেখা যায়, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও একজন যুদ্ধাপরাধী ও ঘৃণিত রাজাকার। এর প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের একপর্যায়ে আব্দুর রাজ্জাক পালিয়ে প্রথমে লন্ডনে, তারপর চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন তিনি দুই জায়গাতেই বসবাস করছেন। প্রবাসে জামায়াতকে সংগঠিত করার কাজ করছেন। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত বলেও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে বলে জানা যায়।
২ বছর আগে হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত ত্যাগ করেন। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে আর সম্পৃক্ত নন বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও করেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটি স্রেফ একটি সাজানো নাটক। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সেই ধরনের কর্মকাণ্ডই করছেন যা করতো যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযম।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর গোলাম আযম প্রথমে পাকিস্থানে, পরে সেখান থেকে সৌদি আরব এবং তারপর লন্ডনে চলে যান। লন্ডনেই তিনি অবস্থান করেছিলেন ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট পরবর্তী কিছু সময়। এরপর গোলাম আযমকে ঢাকায় নিয়ে আসেন বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশ ছাড়ার পরেও থেমে ছিল না গোলাম আযমের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা। তিনি সৌদি বাদশাহকে ৭ বার চিঠি দিয়েছেন যেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়। তার সেই অনুরোধ রেখেছিল সৌদি সরকার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগ পর্যন্ত সৌদি আরবের স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যর পরদিন ১৬ই আগস্ট সেই স্বীকৃতি মেলে।
গোলাম আযম লন্ডনে গিয়ে পলাতক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের একাট্টা করার কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা এবং গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, লুটপাট, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ ঘৃণ্য সকল অপরাধ করার পরেও কোনো ভুল করেনি রাজাকার, আল বদর, আল শামস সদস্যরা- এটি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য হেন কোনো চেষ্টা নাই গোলাম আযম করেননি। সেই সময় পাকিস্থান পুনরুদ্ধার আন্দোলনও করেছিলেন গোলাম আযম। স্বজনহারা বাংলাদেশিদের সামনে ভালো সাজতে গিয়ে গোলাম আযম আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত ত্যাগ করেছিলেন, তিনি জামায়াতের নেতা নন বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল।
এমনকি যখন পাসপোর্টহীন গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফেরান জিয়াউর রহমান, তখন তাকে প্রকাশ্য আমির করা হয়নি, গোপন আমির হিসেবে জামায়াতের দায়িত্ব পালন করতেন। ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে আব্বাস আলী খান দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এতেও জনগণের ক্রোধ কমেনি। বায়তুল মোকাররমের সামনে জনতা তাকে জু’তাপেটা করেছিল। ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে তখনই একাত্তরের শকুন গোলাম আযম নিজের আসল রূপে ফেরেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এখন নব্য গোলাম আযমের ভূমিকা পালন করছেন। নিজের যুদ্ধাপরাধের দায় এড়ানোর জন্য তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, লন্ডনে আশ্রয় গ্রহণ করে বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধী এবং উগ্র-মৌলবাদের অপবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত ত্যাগ করেছেন। যদিও জামায়াতের বি টিম- এবি পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
রাজাকার রাজ্জাক এখনও জঙ্গিবাদকে লালন করেন। বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই হলেন প্রধান ব্যক্তি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন অপতৎপরতা চালানো, নিজে একজন আইনজীবী হওয়ার কারণে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংস্থায় নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পুনর্গঠনের কাজে রাজ্জাক ভূমিকা রাখছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আর এসব ভূমিকার কারণেই তিনি এখন নব্য গোলাম আযমরূপে আবির্ভূত হয়েছেন বলে বোদ্ধা মহলের বক্তব্য। ব্যারিস্টার রাজ্জাকই ছদ্মবেশে জামায়াতের এখন প্রধান নেতা, এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই।