সময় এখন:
ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু এবং কলেজছাত্রী প্রীতিকে হত্যাকারী শ্যুটারকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে সেই কিলার জয়পুরহাটে অবস্থান করছিলেন বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, মাসুম মোহাম্মদ আকাশ ৩ দিন আগে এই হত্যাকাণ্ডের চুক্তি নেন। তবে তদন্তের স্বার্থে ঘটনায় জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও জানান, তারা যখন নিশ্চিত হন আকাশ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তখন দেশ ছেড়ে পালাতে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য জয়পুরহাটে চলে গেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা মধ্যেই শ্যুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে টিপু-প্রীতি হত্যা মামলায় আকাশকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান গোয়েন্দা প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আকাশ ঘটনার ৫ দিন আগে জেনেছেন একজনকে হত্যা করতে হবে। আর ৩ দিন আগে জাহিদুল ইসলাম টিপুর নাম তার হাতে আসে।
ঘটনার আগের দিন ২৩শে মার্চেও মোটরসাইকেলে করে এজিবি কলোনি এলাকা রেকি করে টিপুকে গুলি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আশেপাশে বেশি মানুষ থাকায় তা করতে পারেননি।
হাফিজ বলেন, ঘটনার আগেরদিন আকাশ সেই মোটরসাইকেল এবং একটি পিস্তল নেন এজিবি কলোনি এলাকায় টিপুকে টার্গেট করে হত্যা করতে। কিন্তু সেদিন না পেরে পরদিন গুলি করে হত্যা করেন।
২৩শে মার্চ টিপু নিজের রেস্টুরেন্ট থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলে, রাস্তা অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেন মাসুম। তবে বেশি লোকজন থাকায় সেদিন ব্যর্থ হন।
পরদিন এক ব্যক্তি টিপুর রেস্টুরেন্টে অবস্থান করে আকাশকে আপডেট দিতে থাকেন। তিনি মোটরসাইকেলে করে হত্যাকাণ্ডের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যান।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ যখন নিশ্চিত হয় এই হত্যাকারী সম্পর্কে, ততক্ষণে তিনি সীমান্ত পাড়ি দেবার জন্য জয়পুরহাট চলে গেছেন।
কিলিং মিশন শেষ করেই ঢাকা থেকে জয়পুরহাটে চলে যান আকাশ। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাতে ব্যর্থ হয়ে পরদিন বগুড়ায় চলে যান মাসুম অন্য সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়তে।
পরে বগুড়া জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আকাশ মনে করেছিলেন তিনি ধরা পড়বেন না। গ্রেপ্তারের পর তিনি নিজেই এসব কথা জানিয়েছেন পুলিশকে।
পুলিশ জানায়, মাসুমের সাথে নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেলে আরও একজন ছিলেন। এছাড়াও কয়েকজনের নাম তিনি বলেছেন, যা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করেনি পুলিশ।
মাসুম দাবি করেন তার নামে থাকা কয়েকটি মামলা থেকে তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হবে এই শর্তে তিনি খুন করতে রাজী হয়েছেন।
মহানগর গোয়েন্দা প্রধান জানান, ঘটনার ৫ দিন আগে কাট-আউট পদ্ধতিতে (কয়েক স্তর পার হয়ে আসা কন্ট্রাক্ট সিস্টেম, যেখানে মূল কন্ট্রাক্টদাতার কোনো পরিচয় অগোচরে থেকে যায়) একজনকে হত্যার কন্ট্রাক্ট পান মাসুম। তবে এজন্য কত টাকার প্রস্তাব ছিলো সেটা জানা যায়নি।
পুলিশ জানতে পারে, গ্রেপ্তারকৃত আকাশের নামে এলাকায় বেশ কিছু মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে হত্যা মামলাও আছে। সেসব মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টিপুকে হত্যার কন্ট্রাক্ট দেওয়া যায়।
পুলিশ বলছে, আকাশ স্বীকার করেছে তার উদ্দেশ্য ছিলো শুধুই টিপুকে হত্যা করা। কিন্তু কীভাবে প্রীতির গায়ে গুলি লেগেছে তা তিনি বুঝতে পারেননি। পরে টিভি দেখে জানতে পেরেছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলী মানামা ভবনের সামনের সড়কে মাইক্রোকারে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে লক্ষ্য করে উপুর্যপুরি গুলি চালালে ঘটনাস্থলের কাছে রিকশায় থাকা কলেজ শিক্ষার্থী প্রীতির গায়েও গুলি লাগে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। টিপুর শরীরে গুলির ১৩টি ক্ষত মিলেছে বলে জানান চিকিৎসকরা।