সময় এখন:
আমেরিকায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র নাথ সিনহার একটি বিলাসবহুল তিনতলা বাড়ির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।
এ সংক্রান্ত নথিপত্রও পাওয়া গেছে। ফলে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দুদক।
গুগল ম্যাপ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিলাসবহুল এলাকা নিউজার্সির প্যাটারসনে তিনতলা ওই বিলাসবহুল বাড়িটির মোট আয়তন ৪ হাজার বর্গফুট। বাড়িটিতে মোট ৯টি শয়নকক্ষ রয়েছে। একটি ব্রোকার হাউজের ওয়েবপেজে বলা হয়েছে বাড়িটি ২০১৯ সালের ২১শে জুন সাড়ে ৩ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
সাবেক বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান চলার এক পর্যায়ে দুদক কর্মকর্তা আনোয়ার প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ একাধিক চিঠি লেখেন। এসব চিঠিতে সিনহার সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দেশটিতে এস কে সিনহার সম্পদের বিস্তারিত তথ্য পাঠায় দুদকের কাছে। এসব নথিপত্রে উঠে এসেছে সিনহা কীভাবে নিউজার্সিতে একটি তিনতলা বাড়ি কিনেছেন এবং কোথা থেকে অর্থের সংকুলান করেছেন।
বিচারপাতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব থাকা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার খান জানান, মামলা করার মতো প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নথি তাদের হাতে চলে এসেছে। তাই মামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা নথিপত্রে দেখা গেছে, বিচারপতি এস কে সিনহা তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহাকে ব্যবহার বাড়ি কেনার অর্থ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাচার সেই টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি তিনতলা বাড়িটি কিনেছেন।
অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। সেখানের একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন তিনি। আরও একটি বাড়ি কেনেন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়ে।
২০১৮ সালের ১১ই এপ্রিল থেকে ২০শে জুন পর্যন্ত নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমারের হিসাবে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়।
২০১৮ সালের ৫ই মার্চ থেকে ২৮শে মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ১০ ডলার জমা হয়। এসব ডলার ইন্দোনেশিয়া ও কানাডার রয় গ্রুপের কাছ থেকে পাওয়া, যা প্রকৃতপক্ষে একটি সেলস কোম্পানি।
অনন্ত কুমার সিনহা তার দাদা সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান, তখন তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি কেনার জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষেই সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তার ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে অর্থ ট্রান্সফার করেন।
এ দিয়ে ১৭৯ জ্যাস্পার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউজার্সি ০৭৫২২-তে ২০১৮ সালের ১২ই জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার খরচ করে একটি বাড়ি কেনেন। সুতরাং বাড়িটি পরোক্ষভাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহারই। ব্যক্তিগতভাবে প্রভাব খাটিয়ে অর্থপাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনেন তিনি।
এস কে সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে অর্থোপার্জন করে ভোগ দখলে রেখে এবং অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপন করে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর আগে, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ৪ বছর এবং ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে ঋণ জালিয়াতির মামলায় ৪ বছর এবং অর্থ পাচারের মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে ২৩ জন বিচারক প্রধান বিচারপতি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অনেক দিক দিয়েই প্রথম। তিনিই প্রথম প্রধান বিচারপতি, ২০১৭ সালের নভেম্বরে যার দায়িত্বের অবসান হয়েছিল পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক প্রধান বিচারপতি, দুর্নীতির দায়ে যার সাজার রায় এসেছে আদালতে। ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলার তাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত।