অর্থনীতি:
দেশে সরিষা, সয়াবিন, রাইস ব্রান, তিল, তিসিসহ বিভিন্ন তেলবীজ থেকে তেল উৎপাদনের পরিমাণ দেশের বাজারের জন্য এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত না হলেও তেলবীজ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার আশা জাগিয়েছে দেশের কৃষি বিভাগ।
এরই মাঝে সয়াবিনের একটি নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যার বীজ থেকে ২৫% অতিরিক্ত তেল পাওয়া সম্ভব বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদার সিংহভাগ সয়াবিন তেল হলেও দেশে উৎপাদিত তেলবীজ থেকে সয়াবিন আসে মাত্র ৩%। বাকিটা আমদানিনির্ভর।
সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার পর ভোজ্যতেলের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও শরণাপন্ন হলেন দেশের কৃষিবিদদের।
ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বছরের পর বছর বাংলাদেশের কৃষিতে অভাবনীয় অবদান রেখে গেছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। তাদের উদ্ভাবনী শক্তিতে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাদের এই সাফল্য আমাদেরকে আশাবাদী করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত কয়েক বছর আগে তাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে দেশেই যেন কৃষকরা অধিক তেলবীজ চাষ এবং তেল উৎপাদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
আর ক্রমাগত গবেষণায় নিয়োজিত কৃষিবিদরাও সুফল মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন আশাবাদ।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এছাড়া পাম চাষের পরিমাণও অতি নগণ্য। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার বুঝে অধিক মুনাফা অর্জনকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ এবং দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা নতুন উদ্ভাবিত সয়াবিনের এই জাতটি দেশে চাষাবাদ বাড়ালে অনেকাংশেই সয়াবিন তেলের চাহিদা নিজেরাই পুরণ করতে পারব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে, পাম চাষের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট-এর মত এলাকাগুলোতে পাম চাষ সম্প্রসারণের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা।
কৃষি উন্নয়ন বোর্ড সয়াবিনের পাশাপাশি বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী উন্নত এবং দ্রুত ফলনশীল পাম গাছের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে রাইস ব্রান অয়েল দেশে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চাল উৎপাদক এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক হয়েও চালের তুষ ভারতে রপ্তানী করে বাংলাদেশ।
অথচ, সেই তুষ থেকে তেল উৎপাদন করে উপজাত হিসেবে জৈবসার ও পোল্ট্রিফিড উৎপাদন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে পারত। কিন্তু তা না করে উল্টো রাইস ব্রান অয়েল আমদানি করা হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তুষ আমদানি করে সেই তুষ থেকে তেল উৎপাদন করে উল্টো বিশ্ববাজারে রপ্তানী করে ভারত।
এমতাবস্থায় তেল উৎপাদনকারী এবং আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়টির ওপর জোর দিতে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারী উদ্যোগে রাইস ব্রান, পাম ও সয়াবিন তেল দেশীয়ভাবে উৎপাদন, পরিশোধন এবং অ-পরিশোধিত তেল বিপণনের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) সমস্ত পণ্যই সংগৃহীত হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ টিসিবির পণ্যের জন্য নিজস্ব সরকারী উৎপাদন ব্যবস্থা, বিপণন ও ব্যবস্থাপনা করা যায়। ভারতের মত আধার কার্ড সিস্টেম চালু করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বর্তমানে ১ কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য পরিবারিকভাবে টিসিবি কার্ড দেয়া হয়েছে। যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও পর্যাপ্ত নয়।
এছাড়া এ বিষয়ে কিছু কিছু জায়গায় অসাধু লোকজনের হস্তক্ষেপ এবং অনিয়মের তথ্যও মিলেছে। তবে ভোক্তা অধিকার আইন এবং সুরক্ষা আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে জিনিসপত্রের চড়া মুল্য কমানো সম্ভব।
উল্লেখ্য, তেল আমদানীতে ভ্যাট কমানো হলেও ব্যবসায়ীরা তেলের দাম কমিয়েছেন মাত্র ৫-৮ টাকা। এমতাবস্থায়, নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি, বেসরকারি ব্যবস্থাপনা ছাড়াও সরকারী উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য বিপণন ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বন্ধ করলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।