স্পেশাল করেসপন্ডেন্স:
খালেদা জিয়া পঞ্চম মেয়াদে আবার ৬ মাসের জামিন পেয়েছেন। তবে অন্যান্য বার তিনি যেভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন, এবার তেমনটি হবে না বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়া ঘরোয়াভাবে হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবেন এবং নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন পরামর্শ-দিক নির্দেশনা দেবেন।
বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছে। সরকারও চাইছেন খালেদা জিয়া আস্তে আস্তে রাজনীতির মাঠে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখা শুরু করুক। সরকার খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।
তবে রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার আস্তে আস্তে সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি বিএনপির নেতারাও ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। বিএনপি নেতারাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, তারা এখন আসলে অভিভাবকহীন। খালেদা জিয়া যদি রাজনৈতিক বিষয়ে খোঁজ-খবরও রাখেন, তিনি যদি ছোটখাটো ঘরোয়া পরামর্শও দেন তাহলে দল গোছানো অনেক সহজ হবে।
তবে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে বিএনপি নেতাদের মূল প্রত্যাশা, তারেক রহমানের লাগাম টেনে ধরা। তার স্বেচ্ছাচারিতা বিএনপিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে কোনো সিনিয়র নেতাই নিজেদের মান-সম্মান রক্ষা করে চলতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা ঘরোয়া আলাপে জানান, প্রতিদিন তারা আতঙ্ক থাকছেন আজকে কে অপমানিত হবেন। তারেক রহমান প্রতিদিনই দুপুর দুটোর পর থেকে বিভিন্ন নেতাকে ফোন করা শুরু করেন। তাদেরকে বিভিন্ন ইস্যুতে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এটিই এখন বিএনপির জন্য নিয়মে পরিণত হয়েছে।
তারেক রহমানের দৈনন্দিন রুটিন নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের একজন কর্মী বলেন, তিনি তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন, ছাত্রদলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের সাথে কথা বলেন, যুবদলের নেতাদের সাথে কথা বলেন। এরপর তাদের কাছ থেকে সত্য-মিথ্যা যে তথ্যগুলো পান তা যাচাই-বাছাই না করে একটা সিদ্ধান্ত নেন। যার আলোকে তিনি বড় নেতাদেরকে চিল্লাপাল্লা করেন।
এই বিষয়টি মন থেকে মেনে নিতে পারছে না, একে অগ্রহণযোগ্য ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী বলে বিএনপির অনেক বয়স্ক নেতা মনে করেন। এসব নিয়ে তারা ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) বলতে চান, কিন্তু ম্যাডামের যে অবস্থা তাতে এসব শোনার অবস্থায় নেই তিনি, বলেন ওই কর্মী।
বিএনপির ঢাকা মহানগরের একজন নেতা বলছেন, আগে স্থায়ী কমিটির তাও একটা কদর ছিল। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে হত। যদিও সিদ্ধান্তগুলো নিতেন ম্যাডাম। তারপরও একটি সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। কিন্তু এখন এসবের তোয়াক্কা করা হয় না। বিএনপিতে এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা গঠনতন্ত্রবিরোধী ও স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র বলছে, যেকোনো বহিষ্কার স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে করতে হবে। কিন্তু এখন তারেক সাহেব যেভাবে চাইছেন সেভাবেই হচ্ছে। দলের বিভিন্ন কমিটি বা নেতৃবৃন্দের কোনো কার্যক্রম নেই। তাদের একমাত্র কাজ তারেক সাহেবের কথা অনুযায়ী কাজ করা। তাতে দলের ভাবমূর্তির বারোটা বাজলেও। এভাবে একটি রাজনৈতিক দল চলতে পারে না।
এসব কারণেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা আবারও খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে সক্রিয় করতে চাচ্ছেন। এক হিসেবে সরকারের অভিপ্রায় এবং বিএনপির ইচ্ছা একই বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। আর বিএনপির টিকে থাকার জন্য এছাড়া উপায় দেখছেন না নেতারা।
সরকার মনে করছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ‘ভাইটাল রোল প্লে’ করতে পারেন। বিশেষ করে তিনি যেহেতু নির্বাচন করতে পারবেন না, কাজেই তিনি যদি দলের নেতৃত্বকে নির্বাচনমুখী করেন বা নিজেকে জেলের বাইরে রাখার জন্য দলকে নির্বাচনে যাওয়ার নির্দেশ দেন তাহলে কেউই তা অমান্য করতে পারবে না। ফলে বিএনপির একটি বড় অংশই শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, খালেদা জিয়া যদি কিছুটা সক্রিয় থাকেন তাহলে তারেকের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে, তারেক যা খুশি তাই করতে পারবে না। তার লাগাম একমাত্র খালেদা জিয়াই টেনে ধরতে পারেন বলে তারা মনে করছেন।
এ কারণেই ক’দিন ধরেই খালেদা জিয়া যখন কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন, দলের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। খালেদা জিয়া যদি আরো সক্রিয় হলে সরকারও হয়তো খুব একটা আপত্তি করবে না।