অর্থনীতি ডেস্ক:
বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের বাজারেও। কিন্তু সরকারের ত্বরিৎ এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পর কেটে গেছে শঙ্কার মেঘ। আমদানিকারকরাও দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট দূর করতে দ্রুততর সময়ে তেল নিয়ে এসেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে ৩টি জাহাজ। এই তিন জাহাজে আছে ৭৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল।
আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, এই অপরিশোধিত সয়াবিন তেল পরিশোধন করে রোজার আগেই বাজারজাত করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে রোজায় আর তেল নিয়ে কোনো সংকট থাকছে না, এটা নিশ্চিত।
সুখবর আরও আছে। সয়াবিন ছাড়াও ৫টি জাহাজে রোজার পণ্য- ছোলা, মটর ডাল, মসুর ডাল, চিনি আনা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। এ ছাড়া রোজায় ব্যবহার বেশি না হলেও ৩টি জাহাজে করে গম আনা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার টন। সব মিলিয়ে ১৩ জাহাজে ৪ লাখ ৮২ হাজার টন রোজার পণ্য এসেছে। কোনো কোনো জাহাজের পণ্য এরই মধ্যে খালাস শেষ হয়ে গেছে। খালাস চলছে কোনোটি থেকে। অন্য জাহাজগুলোর পণ্য এখন খালাসের অপেক্ষায়।
রোজার সময় যে সকল পণ্যের অব্যাহত চাহিদা থাকে, সেসব পণ্য ইতিমধ্যে দেশের বাজারে ঢুকেছে। ফলে সংকট থাকছে না, এমনটাই মত বাজার পর্যবেক্ষকদের।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন নিয়ে বন্দর জলসীমায় এসে পৌঁছেছে দুটি জাহাজ। আগামী শনিবার আরও ৪৩ হাজার টন সয়াবিন তেল নিয়ে আরেকটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, টিকে গ্রুপ ও সেনা এডিবল অয়েল লিমিটেড এই সয়াবিন তেল আমদানি করেছে।
এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পাম তেল এসেছে ১২ হাজার টন। আরেকটি জাহাজে আনা হয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার টন সয়াবীজ। সয়াবীজ মাড়াই করে প্রাণিখাদ্য সয়ামিলের পাশাপাশি অপরিশোধিত সয়াবিন তেল তৈরি করা হয়।
আমদানিকারকেরা বলছেন, প্রায় কাছাকাছি সময়ে সয়াবিন তেলবাহী ৩টি জাহাজের আগমন দেশে এই পণ্যের সংকট হওয়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা ঘোচাবে। এই তিন জাহাজে সয়াবিন তেল আসার আগে ট্যাংক টার্মিনালে সয়াবিন তেলের মজুত ছিল মাত্র ১৪ হাজার টন। নতুন চালান আসায় শঙ্কার মেঘ কেটে গেছে।
জাহাজ থেকে খালাস করে প্রথমে পতেঙ্গায় ট্যাংক টার্মিনালগুলোতে রাখা হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিশোধন কারখানায় নেওয়া হবে। পরিশোধন করে বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে তারা জানান।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম বাড়ছে। এরপরও সরকারের নির্দেশ মেনে আমদানি অব্যাহত রেখেছি আমরা। নতুন আসা সয়াবিন তেলের চালান দ্রুত খালাস ও পরিশোধন করে বাজারজাত করা হবে। এর বাইরে নতুন করে এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে।’ নতুন আসা চালান আগের চেয়ে বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কমোডোটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের সর্বশেষ লেনদেন অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পর সয়াবিন তেলের দাম বেড়েই চলেছে। ১১ই মার্চ সয়াবিন তেল বেচাকেনা হয়েছে ১ হাজার ৮১১ ডলারে। আন্তর্জাতিক বাজারেই প্রতি কেজির দাম পড়েছে ১৫৫ টাকা।
কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে দর বাড়লেও ১১ই মার্চের দরে এখনো সয়াবিন আমদানি হয়নি। তবে আমদানিমূল্য বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া অপরিশোধিত সয়াবিনের আমদানিমূল্য পড়েছে প্রতি টন ১ হাজার ৪৮০ থেকে ১ হাজার ৪৯০ ডলার। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১২৭ টাকা। এই টাকার সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট এবং পরিশোধন, পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে বাজারে ছাড়বে কোম্পানিগুলো।
সয়াবিনের মতো ছোলা ও মসুর ডালের ৫৮ হাজার টনের দুটি চালান নিয়ে দুটি জাহাজ এসেছিল ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। জাহাজ দুটি থেকে এসব পণ্য খালাস শেষ হয়েছে ২ দিন আগে। এ ছাড়া ৪৭ হাজার টন মটর ডালের একটি চালান এখন খালাস হচ্ছে। আর ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনিবাহী দুটি জাহাজ থেকে খালাস চলছে।
ডালজাতীয় পণ্যের বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, বছরজুড়ে পণ্য আমদানি করি আমরা। রোজায় বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে আমদানি বেশি হয়।
তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানের রোজায় পণ্য আমদানির সিংহভাগই দেশে এসে পৌঁছেছে। রাশিয়া থেকে মটর ডালের একটি চালান আটকে গেছে। এর বাইরে সামান্য কিছু পরিমাণ পণ্য রোজার আগে আসবে।
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, যুদ্ধের ডামাডোলের ভেতরেই যেভাবে পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে, তার সুফল পাবেন সাধারণ ভোক্তারা। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে বেশি, বাজারে তার সরবরাহ প্রচুর। ফলে পণ্য নিয়ে যে হাহাকার দেখা দিয়েছিল গত কিছুদিন ধরে, তা আর থাকবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।