আইন আদালত ডেস্ক:
দেশে সয়াবিন তেলসহ ভোগ্যপণ্য মজুত করে যারা জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছেন সেইসব সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে আদালতে করা এক রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন আদালত।
এরপর সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে করা রিটের আদেশ দিতে সোমবার দিন ধার্য করেন।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চ প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ দিন ঠিক করেন।
শুনানিতে হাইকোর্ট আরও মন্তব্য করে বলেন, দেশের জনগণকে জিম্মি করে মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার পরিচয় দেয় না।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবির। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির আদালতে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। ভোক্তা অধিকার আইনে আমরা প্রতিকার পাচ্ছি না। ভোক্তার অধিকার রক্ষা হচ্ছে না। সারা দেশের মানুষ কষ্টে আছে। তারা সহনীয় দামে তেল কিনতে পারছে না। তাই বলছি এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার।
এ সময় আদালত রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি রশিদ আনেননি কেন? দাম যে বাড়লো তার জন্য তো ৮-১০টি রশিদ আনতে পারতেন। আর কেবল তেল কেন? সামনে রমজান মাস। পেঁয়াজসহ আরও অনেক পণ্য আছে, সেগুলোসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি হতে পারে।
শুধু সয়াবিন তেল নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের কথা রিটে অন্তর্ভুক্ত করুন। টিসিবির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে নীতিমালা করা প্রয়োজন।
সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যারা কুক্ষিগত করে রেখে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
গত ৬ই মার্চ সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের ৩ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবির ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ।
শুধু সয়াবিন তেলের বিষয় নিয়ে রিটটি করা হলেও পরে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রিটে বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), প্রতিযোগিতা কমিশনের মহাপরিচালক, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, টিসিবির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
রিটে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সয়াবিন তেল টিসিবির মাধ্যমে কেন আমদানি করা হচ্ছে না এবং সয়াবিন তেল টিসিবির মাধ্যমে আমদানি করার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
একইসঙ্গে সয়াবিন তেল রেশন কার্ডের মাধ্যমে বিতরণ, সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং ভোক্তা অধিকার আইন কেন সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না, এ বিষয়ে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে বেআইনি ঘোষণা করতে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে রিটে।
এর আগে ৩রা মার্চ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন ৩ জন আইনজীবী। তারা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন।
এরপর এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন।