ফিচার ডেস্ক:
ভ্লাদিমির পুতিন, এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত নাম। ইউক্রেন আক্রমণের আগে থেকেই ভ্লাদিমির পুতিনকে মনে করা হতো বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বে রাশিয়ার সামরিক পুনর্জাগরণ ঘটেছে। আর এই পুনর্জাগরণের মধ্য দিয়েই প্রশ্ন উঠেছে ভ্লাদিমির পুতিন আসলেই কী? তিনি কি একজন নব্য স্বৈরাচার নাকি কম্যুনিস্ট?
ভ্লাদিমির পুতিন ১৯৯৯ সালে থেকে কোনো না কোনোভাবে রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রে। কখনও তিনি রাষ্ট্রপতি, কখনো প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৩ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ পুতিনের হাতেই। আর একক ক্ষমতা গ্রহণ করে তিনি রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতি যতটা না করতে পেরেছেন, রাশিয়াকে পরাশক্তি হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
পুতিন যেমন একদিকে ক্ষমতাকে নিজের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছেন, সে জন্যই তাকে মনে করা হয় নব্য স্বৈরাচার। সেখানে গণতন্ত্রকে সীমিত রেখেছেন। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীকে হাতে রেখে পুতিন রাশিয়ায় বিরোধী মত দমন করেছেন নতুন করে। তবে তাতে সত্যিকার অর্থে রাশিয়ারই উন্নতি হয়েছে সার্বিকভাবে।
ভ্লাদিমির পুতিনের আসল পরিচয়, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একসময়ের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা কি খুব সঙ্গোপনে রাশিয়াকে সোভিয়েত যুগে নিয়ে যেতে চান কি না, সেটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন।
কারণ, গর্বাচেভের পর রাশিয়ায় যে গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতি চালু হয়, সেই নীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন টুকরো টুকরো হয়ে অনেকগুলো দেশের জন্ম দেয়। আর প্রধান অংশটি রাশিয়া হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করে। রাশিয়াকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হলেও পুতিন এই রাষ্ট্রকে আবার ঠিক কমিউনিস্ট আদলেই পরিচালনা করছেন।
রাশিয়া এখন যেকোনো অর্থেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত নয়। বরং নতুন রূপে সেখানে কমিউনিজম ফিরে এসেছে পুতিনের নেতৃত্বে, এমনটি মনে করা হয়। লেনিন, স্তালিন, ব্রেজনেভের সময় যেভাবে একটি দল রাষ্ট্রের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো এবং সরকারই ছিল সর্বেসর্বা, বিরোধী মতকে দমন করা হতো ঠিক তেমনি একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছেন পুতিন বর্তমান রাশিয়ায়।
পুতিনের রাশিয়া আগেকার সোভিয়েত আদলেরই ভিন্ন রূপ। শুধু পার্থক্য, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আগে যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, তা শিথিল করা হয়েছে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবার অন্যভাবে বিশ্লেষণ করলে পুতিনের নেতৃত্বে একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, যার হাতে কুক্ষিগত সকল সম্পদ।
রাশিয়ায় বৈষম্য বেড়েছে, গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি হয়েছে এবং মুষ্টিমেয় কিছু লোক ব্যাপক বিত্তের মালিক হয়েছেন। তাই প্রচণ্ড ক্ষমতাধর হলেও তিনি লেনিন বা স্তালিনদের মতাদর্শী নন, মনে করেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বিশ্লেষকরাই।
পুতিন এখন যা করছেন, সেটি এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদ ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। তিনি রাশিয়ায় যদি আবার সমাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন কিংবা রাশিয়াকে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করান, তবুও তাকে একজন কমিউনিস্ট বলা যাবে না। কারণ, কমিউনিজমের নীতি-আদর্শের থেকে পুতিন আছেন বহুদূরে।