জিয়াউর রহমানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড: ১৯৬৫-১৯৭৯

0

স্পেশাল করেসপন্ডেন্স:

পাকিস্থানের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা- আইএসআই’র চৌকস কর্মকর্তা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ১৯৬৫-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কর্মকাণ্ড অত্যন্ত রহস্যজনক। যা তার অবস্থানকে নিশ্চিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাংলায় কথা বলা বা লিখতে না পারা পাকিস্থানি আজ্ঞাবহ এই কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ছিলেন পাকিস্থানের প্রতি অনুগত।

তার অপকর্ম এবং বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেখে নেয়া যাক-

১৯৬৫: পাক-ভারত যুদ্ধে জিয়াউর রহমান পাকিস্থানের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি পাকিস্থান সেনাবাহিনীর অনুগত এবং প্রচণ্ড রকম ভারতবিদ্বেষী ও মুজিববিদ্বেষী ছিলেন।

১৯৬৮-৬৯: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে খ্যাত “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের মামলা”য় পাকিস্থান সামরিক সরকারের কৌঁশুলি কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানের সহকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান।

১৯৭১: ২৫ মার্চ- ঢাকায় “অপারেশন সার্চলাইট” অনুযায়ী পাকিস্থানি বাহিনী কর্তৃক পূর্ব পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু হয়। এ সংবাদে বাঙালি সৈনিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। মেজর জিয়া বাঙালি সৈনিকদের উদ্দেশ করে চট্টগ্রামে তাৎক্ষণিক এক আবেগময় বক্তৃতায় তার অধীনস্ত সৈনিকদের অস্ত্র সমর্পণের অনুরোধ জানান।

তারপর রাত ২ থেকে আড়াইটার দিকে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত ১,৮০০ বাঙালি নিরস্ত্র সৈনিকের ওপর মাত্র ৫০০ পাকিস্থানি সৈন্য অতর্কিতে হামলা করে। এতে সর্বমোট ১,২০০’র অধিক সৈনিক এবং তাদের পরিবারের নারী ও শিশুরা চরম নির্মমতায় নিষ্ঠুরভাবে শহিদ হন।

১৯৭৪: বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুকের বাসায় আসা যাওয়া করতেন জিয়া। সেই সময় জিয়া বলেছিলেন ফারুককে, ”দেশ বাচাঁনোর জন্য কিছু একটা করা দরকার”।বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য আগে থেকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন জিয়া।

১৯৭৪: ১৩ মে- কর্নেল ফারুক রহমান জিয়ার নির্দেশে শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে সহায়তা চায়।

১৯৭৫: ১৫ আগস্ট- বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী এবং ২০২০ সালে গ্রেপ্তারের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে খুনি আব্দুল মাজেদ জবানবন্দিতে বলে যায়, “বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি জিয়াউর রহমানের ডাইরেক্ট মদদ ছিল।

১৯৭৫: ২৬ সেপ্টেম্বর- এর খুনি মোশতাক-জিয়া চক্র বন্দুকের জোরে কুখ্যাত ‘ইনডিমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের খুনিদের সুরক্ষা প্রদান করে।

১৯৭৫: ৭ নভেম্বর- সকালে ঢাকার রাজপথ আবার সেনা ট্যাংকে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। জিয়াউর রহমান মুক্তি পেয়ে বেতার ভাষণের মাধ্যমে কোনোরকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেই নিজেকে সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন।

১৯৭৫: ৩১ ডিসেম্বর- জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের দালাল আইন বাতিল করে ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন।

১৯৭৬: ২১ জুলাই- জিয়াউর রহমানের সিদ্ধান্তে প্রচলিত আইন-কানুন লঙ্ঘন করে সামরিক আদালতে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।

১৯৭৭: অবৈধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুমতি দেন খুনি জিয়া।

১৯৭৭: ভোটার সংখ্যার চেয়েও বেশি ভোট (১২০%) পড়া জিয়াউর রহমানের সেই ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ মার্কা ব্যালটের প্রহসনের নির্বাচনের কথা জাতি আজো ভোলেনি।

১৯৭৭: ২ অক্টোবর- অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার দায়ে হাজারো নিরপরাধ সেনা সদস্যকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয় তৎকালীন ক্ষমতা-দখলকারী রাষ্ট্রপতি ও সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশে। ঢাকায়, কুমিল্লায় এবং বগুড়ার কারাগারে রীতিমত গণহত্যা চালানো হয়।

১৯৭৭: ৭ অক্টোবর- নামকাওয়াস্তে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৯ অক্টোবর থেকেই জিয়ার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর শুরু হয় গণফাঁসি, ফায়ারিং স্কোয়াড ও গুম।

১৯৭৮: দেশের যুবকদের দুর্নীতিগ্রস্ত করতে যুব কমপ্লেক্সের নামে দেশজুড়ে উন্মুক্ত-চাঁদাবাজির প্রচলন করেন জিয়া।

১৯৭৮: ১১ জুলাই- পাকিস্থানের পাসপোর্ট নিয়ে রাজাকারদের সর্দার গোলাম আযম ঢাকায় আসেন ৩ মাসের ভিসা নিয়ে। তার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও জিয়া সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

১৯৭৯: ৫ এপ্রিল- ৫ম সংশোধনী আইনে প্রণয়ন করে জেল ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দ্বাররুদ্ধ করতে বিষাক্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন জারি করে মেজর জিয়া।

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।