‘গরিবের ত্রাণে ভাগ বসায় যারা, তারা অমানুষ’

0

মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:

করোনা ভাইরাসের সংক্র’মণজনিত কারণে ক্ষ’তিগ্রস্ত মানুষজনকে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অ’নিয়মের বিস্তর অভিযোগ আসছে। প্রথানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরও কোথাও কোথাও ত্রাণ নিয়ে অ’নিয়ম হচ্ছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কাউকে কাউকে জেল-জরি’মানাও করা হচ্ছে। তবুও থেমে নেই অ’নিয়ম।

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্র’মণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ যখন খাদ্যের জন্য দিশেহারা, তখন চাল নিয়ে চালবাজিতে মেতে উঠেছেন স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ও অ’সাধু কারবারি। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান ও সদস্য। তাদের কয়েকজনকে কারাদ’ণ্ড দিয়ে কারাগা’রে পাঠানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ গুনেছেন জরি’মানা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে করোনা নিয়ন্ত্রণের এই জরুরি ছুটির সময়ে এক সার্কুলার জারি হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসহ বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস সং’কটকালে দেশে কর্মহীন মানুষের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে ত্রাণ বিতরণ করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে করোনা ভাইরাসের কারণে শহর ও গ্রামে কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন অবস্থায় আছে। যে সকল মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছে প্রধানমন্ত্রী সে সকল কর্মহীন লোক (যেমন: ভিক্ষুক, দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানগাড়ি চালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার) যারা দৈনিক ভিত্তিতে সংসার চালায়, তাদের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। করোনাসহ নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেয়া প্রতিটি বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বারবার এদিকে নজর দিতে বলছেন সবাইকে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মহল প্রধানমন্ত্রীর ডাকে এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। অনুদান থেকে শুরু করে বেতনের অংশ দান করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। এছাড়া সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও সামর্থ্যবান মানুষেরা নিজেদের মতো করে সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সাহায্যের আহ্বানের পাশাপাশি সাহায্য সামগ্রী দিতে গিয়ে লোকসমাগম করা যাবে না বলেও সতর্ক করেছেন। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেসব পৌছে দিতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ত্রাণ বিতরণ মানেই জটলা আর ধাক্কাধাক্কি। করোনার জন্য যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, তা এই ধরণের ত্রাণ কর্মসূচিতে ব্যাহত হবার আশ’ঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে কিছু কিছু চিত্র প্রকাশও হতে শুরু করেছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমানে সারাদেশে কার্যত লকডাউন চলছে। জরুরী সার্ভিস ব্যতিরেকে বন্ধ রয়েছে প্রায় সবরকম কার্যক্রম। প্রকৃত অর্থে জনবান্ধব ও জনপ্রিয় একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিলক্ষণ জানেন, এর ফলে আয়-উপার্জন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে ক’ষ্টে রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। যেমন- কামার, কুমার, দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানচালক, বাসের চালক-হেলপার, ভিক্ষুক, হতদরিদ্র এমনকি হিজড়া সম্প্রদায় পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এসব শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য অন্তত ছয় মাসের নিত্যপণ্যদ্রব্যের সাহায্য-সহযোগিতাসহ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি আশ্রয়ের ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে। গরিবদের সহায়তার জন্য এবং চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভর্তুকি মূল্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিসিবিও ট্রাক সেলে নায্যামূল্যে বিক্রি করছে নিত্যপণ্য। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, কেউ না খেয়ে থাকবে না। তারপরও দেখা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও ঘটছে অ’নিয়ম-দুর্নীতি-অপচয়-ত্রাণসমাগ্রী নিয়ে লুটপাট ও নয়-ছয়। অন্তত কয়েকটি জেলায় ১০ টাকা কেজির চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে, যার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসন গ্রেপ্তারসহ কিছু ব্যবস্থা নিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সে অবস্থায় আরও কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে।

এই সং’কটেও বাংলাদেশের যেটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে তা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। চলতি বোরো মৌসুমের ফলনও আশাব্যঞ্জক। তরিতরকারি, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস-দুধ-পোলট্রিতেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এর ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ তো দূরের কথা, খাদ্য সং’কটেরও সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এখন দরকার নিয়মিত বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ। যাবতীয় দুর্নীতি ও অ’নিয়ম প্রতিরোধ। ত্রাণ চুরির সঙ্গে জড়িতদের মোবাইল কোর্টে বিচারের কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রশাসনকে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে প্রতিনিয়ত। কঠোর সাজা দিতে হবে দুর্নীতিবাজদের।

লেখক: আর কে চৌধুরী
পরিচিতি: মুক্তিযো’দ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযু’দ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।

Spread the love
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।