সময় এখন ডেস্ক:
দেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক বিভুরঞ্জন সরকার ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ঢাকার একটা ভবনে বাসা ভাড়া পাননি। বাড়ির মালিক তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন- হিন্দু হওয়ায় ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে তার ‘অস্বস্তির’ কথা। হিন্দু ভাড়াটে থাকলে এবং তাদের পূজা-পার্বণ ও অনুষ্ঠানাদির কারনে মুসলমান ভাড়াটেরা ‘অস্বস্তিবোধ’ করেন বলেও ওই মালিকের দাবি।
জানা যায়, ঢাকার শান্তিনগরের পীর সাহেবের গলির আইডিয়াল-প্যানোরমা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের মালিক নিজে মুসলমান। তার ভবনের ফ্ল্যাটগুলো মুসলমান ভিন্ন অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী পরিবারকে ভাড়া দেন না। ওই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটেই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ভাড়াটে নেই। ফলে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী হওয়ায় বিভুরঞ্জন সরকারও ভাড়া পাননি।
‘টু-লেট’ টাঙানো দেখে বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভাড়ার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে আজ ৯ জুন, শনিবার লেখেন, ‘গোল বাঁধলো আমার নাম-পরিচয় বলার পর। বাড়ির মালিক একটু আমতা আমতা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে বলেন, আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আপনি যে হিন্দু! আমাদের এই বিল্ডিংয়ে ৫৪টি ফ্ল্যাট। একজনও হিন্দু ভাড়াটে নেই। এখানে যারা থাকেন, তারা সবাই ধর্মপ্রাণ, নামাজ-কালাম করেন। হিন্দু ভাড়াটে থাকলে তারা অসুবিধা বোধ করেন! পূজা-পার্বণ করলে তারা অস্বস্তিবোধ করেন।’
সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অনলাইনকেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মুসলমান না হওয়ায় ঢাকার অনেক মালিকের বাড়িতে বাসা ভাড়া না পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও লিখছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, আশির দশকের মধ্যভাগে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকা প্রকাশিত হলে ‘তারিখ ইব্রাহিম’ ছদ্মনামে বিভুরঞ্জন সরকারের লেখা রাজনৈতিক নিবন্ধগুলো বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। ষাটের দশকের শেষদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকতেই দৈনিক আজাদের মফস্বল প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় তাঁর হাতেখড়ি। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। সাপ্তাহিক জয়ধ্বনি, একতা, যায়যায়দিন, দৈনিক সংবাদ, রূপালীতে কাজ করেছেন। সম্পাদনা করেছেন সাপ্তাহিক চলতিপত্র, দৈনিক মাতৃভূমি ও সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ।
তিনি গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষণমূলক কলাম লিখছেন বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অনলাইনে। এখনও তিনি নিয়মিত লেখেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, যুগান্তর, সংবাদ ও বর্তমানে। দেশের প্রথম অনলাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেও তিনি নিয়মিত লেখেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১০। তিনি বর্তমানে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত আছেন।