পাবনা সংবাদদাতা:
পাবনার চাটমোহরে গগন সরকার (২১) নামে এক যুবকের সাথে হিন্দু ধর্মীয় মতে আলামিন (১২) নামে এক কিশোরের বিয়ের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার এ ঘটনায় কথিত ‘বর’ গগনের বাবা রাম সরকারকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় চাটমোহর থানা কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে গগনের বাবা অসুস্থ হলে তার মা সুস্থতা কামনা করে পূজা দিতে চেয়েছিল। পরে তাঁর স্বামী সুস্থ হলেও তিনি স্বপ্নে দেখেন যে একটি মুসলিম ছেলের সাথে তার ছেলের বিয়ে দিলে পরিবারের জন্য ভালো হবে। সে কারণেই ছেলে গগনের সাথে আলামিনের বিয়ে দেন তারা।
জানা যায়, বোঁথর গ্রামের রাম সরকার তার ছেলে গগন সরকারের (২১) সঙ্গে হিন্দু ধর্মীয় মতে বিয়ে দেন একই উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের কুয়াবাশী গ্রামের হাবিল উদ্দিনের ছেলে আলামিনের (১২)। ঘটনাটি টের পেয়ে এলাকাবাসী মঙ্গলবার সকালে বিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়। সমকামী বিয়ের এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বিয়ের ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশ এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাম সরকারকে আটক করে।
এদিকে পুলিশ জানায়, মার্চ মাসের ২৮ তারিখে ১৩ বছর বয়সী ছেলেটি মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। রাস্তায় বৃষ্টি এলে সে একটি দর্জির দোকানে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় দর্জি ওই ছেলেটিকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং কয়েকদিনের জন্য তাকে থাকতে দেয়। এক পর্যায়ে দর্জির ২৩ বছর বয়সী ছেলের সাথে ১৩ বছর বয়সী ছেলেটিকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে দেয়া হয়। তবে বিলচলন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী পুলিশের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি।
আলামিন নামের বালকটিকে পুলিশ ‘ভিক্টিম’ হিসেবে উল্লেখ করলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, উভয় পরিবারের সম্মতিতেই এ বিয়ে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে একজনকে পুরোহিত সাজিয়ে হিন্দু রীতিতে গোপনে এ বিয়ে করানো হয়। পরে এ ঘটনা এলাকাবাসী জানতে পারে। এরপর আমি বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।
রাম সরকারের ছেলে গগন সরকার বলেন, গত এক সপ্তাহ আলামিন আমাদের বাড়িতে এসে নানা রকম আধ্যাত্মিক কথা বলতে শুরু করে। তার ভর (অলৌকিক শক্তি) জেগে উঠতো। না দেখেই অনেক কিছু বলা শুরু করে। এতে আমাদের বিশ্বাস হয়। এর মধ্যে আলামিনের ভর (অলৌকিক শক্তি) উঠলে আমার বাবাকে বলে, ‘তোর বড় ছেলের সঙ্গে শিব-পার্বতী সাজিয়ে আমার বিয়ে দিলে পরিবারের কল্যাণ হবে।’ এরপরেই বাবা আমাদের বিয়ে দেন।
আলামিনের মা রোজিনা খাতুন বলেন, প্রতি বছর এই সময় আসলেই আলামিন বাড়িতে থাকতে চায় না। মাঝে মধ্যেই তার ভর (আলৌকিক শক্তি) জেগে ওঠে। এলাকার বিভিন্ন মানুষকে পানি পড়া দিত। গত এক সপ্তাহ আগে আলামিন বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মঙ্গলবার সকালে লোকমুখে বিয়ের কথা শুনে ছেলেকে নিতে এসেছি।
এদিকে বিষয়টিকে ‘সমকামী বিয়ে’ হিসেবেই দেখছেন চাটমোহর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার। তিনি বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানার পর পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছিল। তদন্তে সমকামী বিয়ের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তবে সমকামী হিসেবে মোটামুটি প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি তদন্তও চালানো হচ্ছে।
চাটমোহর থানার ওসি তদন্ত শরিফুল ইসলাম জানান, ভিন্ন ধর্মের সমকামী বিয়ের এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে হাবিল উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় রাম সরকার ও গগনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ৩)। বর্তমান গগন সরকার পলাতক রয়েছে। তাকে ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে।