বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা শুকর ব্যবহার করে মানুষের প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের এক পদ্ধতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন।
তারা শুকরের জিনে এমন কিছু পরিবর্তন করতে পেরেছেন যাতে, শুকরের দেহের অংশ থেকে কোন রোগ মানবদেহে ছড়াতে পারবে না।
গবেষকরা বলছেন জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ৩৭টি শুকরের দেহ তারা ২৫ ধরনের ভাইরাস থেকে মুক্ত করেন, যার ফলে তাদের মধ্যে সংক্র’মণের আশ’ঙ্কা দূর হয়ে যায়।
এরপর ক্লোনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাইরাসমুক্ত শুকরের শাবক তৈরি করা হয়।
বর্তমানে মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য প্রত্যঙ্গ পাওয়া কঠিন- বিশ্বব্যাপী প্রত্যঙ্গের অভাব একটা বড় সঙ্ক’ট।
বিজ্ঞানীরা বলছেন গবেষণায় এই অগ্রগতির ফলে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাওয়া না গেলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে শুকরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
পশুর দেহের অংশ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের এই পদ্ধতি যাকে যেনোট্রান্সপ্লানটেশন (Xenotransplantation) বলা হয় তাতে সাফল্য অর্জনের জন্য বিজ্ঞানীরা গত ২০ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
মানুষ ও শুকরের কোষ একসঙ্গে মিশলে শুকরের দেহের ভাইরাস মানুষের শরীরে সঞ্চালিত হতে পারে। এখন এই গবেষণার ফলাফল সেই আশ’ঙ্কা দূর করার পথে বড় একটা অগ্রগতি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
তবে তারা বলেছেন এখনও এই গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং মানুষের শরীরে শুকরের প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করলে মানুষের শরীরে তা কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করবে কি না সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
৮টি জীবন বাঁচাতে পারে ১টি ডেডবডি!
রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃ’ত্যুবরণকারী রোগীদের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০ মানুষকে ‘নতুন জীবন’ দান করা সম্ভব!
এমন তথ্য শুনলে অনেকেই আষাঢ়ে গল্প বলে মনে করতে পারেন। মৃ’ত মানুষ আবার কীভাবে মানুষকে নতুন জীবন দিতে পারে? কিন্তু বাস্তবে এমনটা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সোসাইটি অব অর্গান ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ।
মৃ’ত মানুষ কীভাবে নতুন জীবন দান করতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে অর্ধশতাধিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ রোগী ভর্তির থাকছে। তাদের মধ্যে প্রতিদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত ২৫ জন রোগী মৃ’ত্যুবরণ করছে।
আইসিইউতে কর্তব্যরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতের ভিত্তিতে ব্রেন ডেথ ঘোষিত একজন রোগীর দেহ থেকে চোখ, কিডনি, যকৃত, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, মূত্রগ্রন্থি ও খাদ্যনালী সংগ্রহ করে প্রতি’স্থাপনের মাধ্যমে কমপক্ষে ৮ জন মানুষকে নতুন জীবন দান সম্ভব।
তিনি বলেন, সে হিসেবে প্রতিদিন আইসিইউতে মৃ’ত্যুবরণকারী ২৫ জন রোগীর মাধ্যমে ২০০ মানুষকে নতুন জীবন দান সম্ভব। বিশেষ করে কিডনি বিকল রোগীদের কিডনি প্রতি’স্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন দান সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞানুসারে ‘ব্রেন ডেথ ইজ আল্টিমেট ডেথ’। এ ক্ষেত্রে আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ব্রেন ডেথ ঘোষণা ও সার্টিফিকেট ইস্যু করতে পারেন। ২০১৮ সালে হালনাগাদকৃত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনেও ব্রেন ডেথ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃ’ত রোগীর দেহ থেকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ধর্মীয় বাধা। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ রোগীর স্বজন ধর্মীয় দোহাই দিয়ে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করতে চান না। কিন্তু ধর্মীয়ভাবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দানে কোনো বাধা নেই।
এ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এবং তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে মর’ণোত্তর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দানে উৎসাহিত করতে হবে বলেও জানান তিনি।